শবে কদরের আমল- শবে কদরের রাতে যে সকল আমল গুলো করবেন
রমজান মাসের ফজিলত অনেক।এই মাস ইবাদত কবুল হওয়ার মাস। রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় দিনগুলোর মধ্যে থেকে শবে কদরের রাত খুজতে বলা হয়েছে।এই রাতে কোনো বান্দা আল্লাহর ইবাদত করলে তার অতীতের সমস্ত গুন্নাহ মাফ করে দেন।
আমাদেরকে জানতে হবে শবে কদরের আমল- শবে কদরের রাতে যে সকল আমল গুলো করতে হবে।জানতে হলে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন পড়ুন।
পোস্টের সূচিপত্রঃ- শবে কদরের আমল- শবে কদরের রাতে যে সকল আমল গুলো করবেন
শবে কদরের আমল- শবে কদরের রাতে যে সকল আমল গুলো করবেন
শবে কদরের রাত ইবাদত কবুল হওয়ার রাত,এই রাতে ইবাদত করলে আল্লাহ তায়ালা অনেক খুশি হন
ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকা
শবে কদরের রাত সম্পর্কে নিদিষ্ট করে কিছু বলা হয় নাই।তবে রাসুল সাল্লাল্লাহু (আ.)বলতে গিয়েছিলেন সাহাবীদেরকে।কিন্তু ঐ দিন ২ ব্যক্তির মধ্যো ঝগড়ার কারণে তা আর বলেন না।নবী কারিম (সা.) বললেন, আমি আপনাদের লাইলাতুল কদর/শবে কদরের ব্যাপারে অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আশা করি, উঠিয়ে নেয়াটা আপনাদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে। মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে (২৫ তম,২৭ তম এবং ২৯ তম) তারিখে এর সন্ধান করুন। (বুখারি ৪৯)
সালাতুত তাসবিহের নামাজ আদায় করা
এ রাতে সালাতুত তাসবিহ আদায়ের অনেক অনেক ফজিলত রয়েছে। সালাতুত তাসবিহের নামাজ। সালাত শব্দের অর্থ নামাজ। আর তাসবিহ বলতে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার শব্দগুলো দ্বারা বোঝানো হয়েছে। যে নামাজে এসব তাসবিহ পড়তে হয়, তাকে সালাতুত তাসবিহ বলা হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তার চাচা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে (রা.) সালাতুত তাসবিহের নামাজ আদায়ের শিক্ষা দিয়েছিলেন। রাসুল (স.) তার চাচাকে বলেছিলেন, এই নামাজ পড়লে আল্লাহ তায়ালা আগের ও পরের সমস্ত গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন।
রাসুল (স.) বলেন, চাচা! আপনি যদি পারেন, তবে প্রতিদিন একবার করে সালাতুত তাসবিহের নামাজ আদায় করবেন। যদি প্রতিদিন না পারেন, তবে সপ্তাহে একবার সালাতুত তাসবিহের নামাজ আদায় করবেন। যদি সপ্তাহে না পারেন, তবে মাসে একবার সালাতুত তাসবিহের নামাজ আদায়করবেন। যদি মাসে না পারেন, তবে বছরে একবার আদায় করবেন। যদি এটাও না পারেন, তবে সারা জীবনে একবার হলেও এই নামাজ আদায় করবেন। (বুখারি ৩৪২৩, ইবনে মাজা ১৭৩)।
শবে কদরের আমল যে নিয়মে করবেন
- এশা ও ফজর নামাজ জামাতে আদায় করা
কদরের রাতের ফজিলত ও বরকত লাভের জন্য বেশিরভাগ মানুষ সারারাত নফল নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত করে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে যে ভুলটি করেন তা হলো জামাতে নামাজ আদায়কে গুরুত্ব না দেওয়া। কিন্তু নফল ইবাদতের থেকেও ফরজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
শবে কদরে অন্তত এশা ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করার চেষ্টা করতে হবে। জামাতের সাথে নামাজ আদায় যাতে কোনোভাবে ছুটে না যায় এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করবে, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করলো। (মুসলিম ৬৫৬)
- সালাতুত তাসবিহ নামাজ
সালাতুত তাসবিহ নামাজ চার রকাত। নিয়ত স্বাভাবিকভাবে করলেই হবে। আমি কিবলামূখি হইয়া চার রাকাত নফল নামাজ সালাতুত তাসবিহ পড়ছি। প্রতি রকাতে সুরা ফাতিহার পর যে কোনো সুরা পড়তে হবে।
সালাতুত তাজবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে ৭৫ বার করে, চার রকাতে ৩০০ বার তাসবিহ পড়তে হয়।
প্রথম রাকাতে সানা পড়ার পর তাসবিহ ১৫ বার তাসবিহ পড়বেন। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে সুরা ফাতিহার সাথে অন্য আরেকটি সুরা পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়বেন। রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়বেন। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়বেন। সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়বেন। প্রথম সিজদা থেকে বসে তাসবিহ ১০ বার পড়বেন। আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবি পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়বেন। এভাবে প্রতি রাকাতে মোট ৭৫ বার এ তাসবিহ পড়বেন। একইভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত পড়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
তবে কোনো এক স্থানে তাসবিহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়ে ফেললে পরবর্তী যে রুকনেই তা মনে পড়বে তখন সেখানের তসবিহ সংখ্যার সাথে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নিতে হবে।
রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে যেকোনো একটি রাত শবে কদর হতে পারে। তাই আমাদের প্রত্যেক বেজোড় রাতগুলোতে ইবাদত করা উচিত।এসব রাতে পাঠ করার জন্য হাদিসে বর্ণিত একটি দোয়া রয়েছে।
হযরত আয়েশা (রা.) রাসুল (স.) জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দোয়া পড়বো? তখন রাসুল (স.) বললেন, তুমি বলো-
اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي
উচ্চারণঃআল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিম, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি।
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব,আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)
শবে কদরের রাতে আমল করলে কি হয়
পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে— আমি নিয়শ্চই এই কদরের রাতে কোরআন শরিফ অবতীর্ণ করেছি। (সূরা কদর, আয়াত : ১)
এই আয়াতের মর্ম হল— কোরআন শরিফ লওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে এ রাতে অবতীর্ণ করা হয়েছিল। এই একটি মাত্র বিষয়ই এ রাতের ফজিলতের জন্য যথেষ্ট ছিল যে, আল-কোরআনের মতো মর্যাদাবান ঐশীগ্রন্থ এ রাতে অবতীর্ণ হয়েছে। এই রাতের মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের জন্য অন্য কোনো ফজিলত ও বরকতের প্রয়োজন ছিল না। পরবর্তীতে আয়াতে আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য ইরশাদ হয়েছে— আপনি কি অবগত আছেন যে, কদরের রাত কত মর্যাদা সম্পন্ন রাত? (সূরা কদর, আয়াত : ২)
শবে কদর রাতের ফজিলত বিবরণে আলোচিত হয়েছে— শবে কদর হল হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এর মানে হলো—যে ব্যক্তি শবে কদরে ইবাদত করবে, সে ব্যাক্তি তিরাশি বছর চার মাসের চেয়েও অধিক সময় ইবাদত করার সওয়াব পাবে। এই রাতটি এমন এক অপার মহিমা ও অফুরন্ত বরকতের রাত, যার পুণ্য ও সওয়াব সাধারণ ইবাদতের তুলনায় অধিক, মর্যাদাসম্পন্ন ও অতুলনীয়।
লেখকের শেষ মন্তব্য
শবে কদর মূলত রমজান মাসে এসে থাকে।আমাদের প্রত্যোক মুসলমানের আল্লাহর দেখানো বিধান অনুযায়ী ইবাদত করা উচিত।আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শবে কদরের আমল- শবে কদরের রাতে যে সকল আমল গুলো করবেন, শবে কদরের আমল যে নিয়মে করবেন,শবে কদরের রাতে আমল করলে কি হয় এসব তথ্য তুলে ধরেছি।আশা করি,এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে শবে কদর সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।নিয়মিত এমন তথ্যমূলক বিষয়ে আরও জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
রিফাত আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url