জিলহজ মাস এবং কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ও ব্যাখ্যা

দোয়া কবুল হওয়ার ৫টি ইসলামিক নিয়মআসসালামু ওয়ালাইকুম,আশা করি টাইটেল টি দেখেই বুঝতে পারছেন আজকের আলোচনার বিষয় কি?আজকের আর্টিকেলে জিলহজ মাস এবং কোরবানির ১০টি ফজিলত। সহ হাদিস ও ব্যাখ্যা।ইসলাম ধর্মে আরবি মাসগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মাস জিলহজ মাস।অর্থাৎ,আরবি মাস গুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ একটি মাস।

জিলহজ মাস এবং কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ও ব্যাখ্যা
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য,যিনি আমাদের জন্য ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।আল্লাহর বলেন,প্রকৃত আমার কাছে মাসের সংখ্যা ১২,যা আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে আছে।এই ১২ টি মাসের মধ্যে আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ ৪ টি মাস।যথা: জিলকদ, জিলহজ, মহরম ও রজব।এই ৪ মাসে যুদ্ধ বিগ্রহ, কলহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।আমরা আজ এই আর্টিকেলে শুধুমাত্র জিলহজ মাস এবং কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস তুলে। জানতে হলে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন পড়ুন। 

সূচিপত্রঃ মাস এবং কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ও ব্যাখ্যা

জিলহজ মাস এবং কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে হাদিস ও ব্যাখ্যা

জিলহজ মাসে প্রধানত হজ হয়।প্রধানত ৮ থেকে ১৩ তারিখ এই ৬ দিন হজের কার্যক্রম চলমান থাকে।মহান আল্লাহ বলেন- হে বোধসম্পন্ন ব্যাক্তিরা তোমরা আমাকে ভয় করো (সুরা -২ বাকারা, আয়াত-১৯৭)
রাসুল (স.) বলেছেন যারা কোরবানি করবে তারা জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পূর্বে সমস্ত ক্ষৌরকর্ম করে নেওয়া, যেমন:চুল,নক,গোফ ইত্যাদি কাটা। এরপরে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ কোরবানির পশু কুরবানি করার পরে ঐ দিনের মধ্যে ক্ষৌরকর্ম করে নেওয়া।
একদিন এক ব্যাক্তি রাসুল (স.) কাছে জিজ্ঞেস করলেন আমার যদি কোরবানি করার সামর্থ্য না থাকে এবং আমার পোশা মালামাল বহনকারী উট বা বকরি থাকে তাহলে সেটি কোরবানি করতে পারি কি?উওরে রাসুল (স.) বললেন জিলহজ মাসের ১০ দিনের আগে ক্ষৌরকর্ম গলো করে ফেলা।এটাই আল্লাহর কাছে কোরবানি।(আবুদাউদ, নাসাই, ত্বহাবি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা-৩০৫)
রাসুল (স.) বলেছেন জিলহজ মাসের ১০ দিনের ইবাদত অন্যদিনের ইবাদতের তুলনায় অনেক প্রিয়।প্রতিদিনের ইবাদত একবছরের ইবাদতের সমান এবং প্রতিটি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমান।
জিলহজ মাসের ১০,১১,১২ এই তিনদিন কোনো ব্যাক্তির কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাদে,সাড়ে সাত ভরি সোনা এবং সাড়ে বায়ান্না তোলা রুপা বা এর সমপরিমাণ অর্থ থাকে তাহলে তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। এটা প্রত্যোক পুরুষ এবং নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।(ইবনে মাজাহ-২২৬)

সাহাবারা রাসুল (স.) জিজ্ঞেস করলেন কোরবানি কি? উত্তরে রাসেল (স.) বললেন তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নত। তারপরে সাহাবারা আবার জিজ্ঞেস করলে তাতে কি আমাদের সওয়ার রয়েছে? তখন উত্তরে রাসুল (স.) বললেন কোরবানির পশুর প্রতিটি লোমে একটি করে সওয়াব রয়েছে।(ইবনে মাজার:২২৬) হয়ত হুরাইরা (রা.) তেকে বর্ণিত।

করবানির গোস্ত বন্টনের হাদিস

ইসলামের অন্যতম মৌলিক ইবাদত গুলোর মধ্যে কোরবানি অন্যতম।জিলহজ মাসে ১০,১১,১২ এই ৩ দিনে পশু জবাই করলেই কোরবানি করা হয়ে যাবে না।কোরবানি পশুর রক্ত বা গোস্তোর মধ্যো কোনোটিই কবুল হয় না,শুধুমাত্র কবুল হয় তাকাওয়া।কোরবানি করার মাধ্যমে তাকাওয়া অর্জন করতে হবে।আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের উদ্দেশ্য কোরবানি করতে হবে।কোরবানি করা এবং কোরবানি গোস্ত বন্টন করার কিছু নিয়ম রয়েছে,সেগুলো মেনে কোরবানি করতে হবে।
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুল (স.) কোরবানির গোস্ত ৩ ভাগে ভাগ করতেন। একজন নিজেরা রাখতেন,এক ভাগ প্রতিবেশী এবং আত্নীয় দের মধ্যে বন্টন করতেন আর অন্য এক ভাগ ফকির মিসকিনদের মধ্যে বন্টন করে দিতেন।

কোন ব্যাক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যাক্তির ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে  তার প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর পরে যদি তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলো: সাড়ে সাত ভরি সোনা,সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ যদি অর্থ থাকে তাহলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব)।

এছাড়াও যদি এমন কোনো ব্যক্তি থাকে যার উপর কোরবানি ওয়াজিব হয় নাই কিন্তু সে কোরবানির উদ্দেশ্য পশু ক্রয় করেছে তাহলে তার উপর ঐ পশু কোরবানি করা ওয়াজিব।

কোরবানি যে ব্যাক্তির উপর ওয়াজিব হয়েছে তার উদ্দেশ্য হাদিস শরিফে ইরশাদ আছে, যে ব্যাক্তি কোরবানি করলো না,সে যেনো আমার ঈদগায়ে না আসে।

কোরবানির পশু জবাই কারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া

ইসলামে কোরবানির তাৎপর্য অনেক।পবিত্র কুরআনে এই উদ্দেশ্য সূরা কাউসারে বলা হয়েছে,আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্য নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।
কোরবানির পশু জবাই কারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া এবং নেওয়া জায়েজ।তবে কোরবানির পশুর কোনো অংশ দেওয়া জায়েজ নাই।

কোন দিন কোরবানি করা উত্তম

কোরবানি রাতের বেলা করাও যাবে। তবে দিনের বেলা করা ভালো।ইসলামী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দিন রাতে শুরু হয়।সূর্যাস্তো যাওয়ার সাথে সাথে পরের দিন শুরু হয়।সেক্ষেত্রে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত যাওয়ার সাথে সাথে পরের দিন ১৩ জিলহজ চলে আসে।এই বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত।১৩ জিলহজ কোরবানি করা যাবে না।


১০,১১,১২ এই ৩ দিনের মধ্যে যে কোনো দিন কোরবানি করা যায়েজ।তবে ১০ জিলহজ বা ঈদের দিন দিনের বেলা করা উত্তম। 

লেখকের শেষ মন্তব্য

এই আর্টিকেলের মধ্যে কোরবানি এবং জিলহজ মাস সম্পর্কে বেশকিছু হাদিস তুলে ধরেছি। আশা করি পড়ে উপকৃত হবেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সুস্থ ও সুন্দর জীবন দান করুক এবং হযরত মোহাম্মদ (স.) এর দেখানো পথ অনুসারে জীবন যাপন করতে পারি সেই তৌফিক দান করুন।আমিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রিফাত আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Sazid Hassan Rifat
Sazid Hassan Rifat
আমি সরকারী শহীদ সিরাজউদ্দীন হোসেন মহাবিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। আমি নিয়মিত লাইফ স্টাইল, অনলাইন ইনকাম, টেকনোলজি ও ই সার্ভিস নিয়ে লেখালেখি করি।নিয়মিত নতুন বিষয় নিয়ে লিখে যাচ্ছি যেন সবাই কিছু না কিছু শিখতে পারে। আপনাদের সামনে সকল প্ররকারের সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য তুলে ধরার মাধ্যমে সাহায্য সহযোগিতা করাই আমার মূল উদ্দেশ্য। ধন্যবাদ।।