সুন্দরবন ভ্রমণ গাইড-কোথায় যাবেন, খরচ, নিরাপত্তা ও সেরা সময়
কোরবানির ১০টি ফজিলতসুন্দরবন ভ্রমণ গাইড-কোথায় যাবেন, খরচ, নিরাপত্তা ও সেরা সময়।সুন্দরবন বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যাটন কেন্দ্র।তাই, আপনিও যদি সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চান তাহলে সুন্দর বনের কোন জায়গা সবচেয়ে ভালো,বনের কোথায় যাওয়া যাবে না,খরচ এবং কোন সময় সুন্দর বন ভ্রমণের জন্য সেরা এসব বিষয় যদি আগে জেনে নেন তাহলে কেমন হয়?
আমরা আজকের আর্টিকেলের মধ্যে উপরিউক্ত বিষয় গুলো তুলে ধরবো।আপনি যদি সুন্দরবন ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান,তাহলে আজকের আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ-সুন্দরবন ভ্রমণ গাইড-কোথায় যাবেন, খরচ, নিরাপত্তা ও সেরা সময়
সুন্দরবন ভ্রমণ গাইড-কোথায় যাবেন, খরচ, নিরাপত্তা ও সেরা সময়
বাংলাদেশের জনপ্রিয় পর্যাটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম।পৃথিবীর সবচেয়ে ম্যনগ্রোভ বন সুন্দর বন।এটি খুলনা, বাগের হাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার অংশবিশেষ নিয়ে সুন্দর বন গঠিত। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে অবস্থিত।
সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত।বাংলাদেশের একটি অমূল্য সম্পদ।ইউনেসকো সুন্দরবন কে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী বন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
সুন্দরবন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য প্রাচীর হিসেবে কাজ করে।এটি আমাদের বিভিন্ন প্রকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করে।এছাড়াও,অর্থনৈতিক দিক দিয়েও সাহায্য করে। যেমন: সুন্দরবনের মধু,মাছ,কাঠ,গোলপাতা ইত্যাদি বিক্রি করে বহু মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে।
সুন্দরবন কেন ঘোরার মতো জায়গা
ইউনেসকো সুন্দরবন কে বিশ্ব ঐতিহ্য বাহী বন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।তবে সুন্দর বনের সব জায়গায় ভ্রমণ করা যায় না। কিছু জায়গা রয়েছে,যেখানে যাওয়া যায় না। সুন্দরবন কেন ঘোরার মতো জায়গা-দুবলার চার,হীরন পয়েন্ট,জামতলা সৈকত, করমজল, হারবাড়িয়া,কচি খালি,কটকা।
- দুবলার চর- সুন্দর বন এলাকার মধ্যে ছোট একটি চর,যার নাম দুলবার চর।এখানে রাসমেলা এবং শুটকি জন্য বিখ্যাত এই চর।এখানে জেলেরা মাছ ধরে এবং সেগুলো শুকিয়ে শুটকি মাছ তৈরি করে।
- হীরন পয়েন্ট- হীরন পয়েন্ট কাঠের তৈরি একটি রাস্তা। এই রাস্তাটা দেখতে অনেক সুন্দর,এখানে সব পর্যাটক হাটে এবং বিভিন্ন পশুর দেখা পায়।যেমন: হরিণ, কুমির,বানর,গুইসাপ ইত্যাদি।এছাড়াও, মাঝে মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মেলে।
- জামতলা সৈকত- জাম তলা থেকে ৩ কিলোমিটার হেটে গেলে জামতলা সৈকত দেখতে পাওয়া যায়।এছাড়াও, জাম তলায় একটা টাওয়ার আছে।এই টাওয়ারের উপর উঠলে সুন্দরবনের সুন্দর্য খুব ভালো উপভোগ করতে পারবেন।এখান থেকে বন দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।
- করমজল- মোংলা বন্দরের কাছে করমজল অবস্থিত।এটি বন বিভাগের হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র এখানে রয়েছে গাছপালা, হরিণ,কুমির, বানর ইত্যাদি।আপনি যদি গভীর বনে গিয়ে না দেখতে পারেন সেক্ষেত্রে এখানে যেতে পারেন। এটা বন ভ্রমণের বিকল্প।
- হারবাড়িয়া- হারবাড়িয়া মোংলা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।এটি ভালো লাগার মূল কারণ-বনের মধ্যে দিয়ে তৈরি কাঠের ট্রেইল।এটি ঘুরতে মোটামুটি ৩০ মিনিট সময় লাগবে।এটা ঘুরতে অনেক ভালো লাগবে।
- কটকা সৈকত- কটকা থেকে অল্প একটু হাটলে বঙ্গ সাগরের দেখা যাবে।এটি একটি সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জায়গা।এখানে দল ধরে হরিণ দেখা যাবে।এছাড়াও বিভিন্ন প্রাণী দেখা যাবে।যেমন : লাল কাকড়ার ভূমিতে আকানো ছবি।
সুন্দরবনে যাওয়ার উপায়
সুন্দরবনে যাওয়ার সহজ উপায় কি? এটা অনেকেই ভাবেন,কোন মাধ্যমে যাতায়াত খরচ কম হবে? এসকল বিষয় নির্ভর করে আপনার অবস্থানের উপর।আপনি কোন জায়গা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চাচ্ছেন।নিম্নে ট্রেন/বাস যাতায়াত খরচ তুলে ধরা হলোঃ-
- ঢাকা-খুলনা-সুন্দরবন(রুট)
- বাসঃ ঢাকা থেকে খুলনা বাস (সোহাগ,গ্রীন লাইন,শ্যামলী ইত্যাদি)।সময় লাগে-(৮-১০) ঘন্টা।AC বাস ভাড়া-(১২০০৳-২০০০৳)পর্যন্ত।
- ট্রেন:-ঢাকা থেকে খুলনা রেলপথ(সুন্দরবন এক্সপ্রেস,চিত্রা এক্সপ্রেস)।সময়-(৯-১০)ঘন্টা।ভাড়া-(৫০০৳-১২০০৳)
- খুলনা থেকে সুন্দরবনঃ-
- ঢাকা-মংলা-সুন্দরবনঃ-
মংলা থেকে সুন্দরবন যাওয়া খুব সহজ।কারণ:মংলা বন্দরের কাছেই সুন্দর বন।মংলা থেকে ট্রলার ভাড়া করে তাড়াতাড়ি সুন্দরবনে পৌছানো যায়।খুলনা থেকে মংলা আসতে সময় লাগে,দেড় থেকে দুই ঘন্টা।
- ঢাকা-সাতক্ষীরা-সুন্দরবন-
যারা সুন্দরবনের পশ্চিমে ঘুরতে চান অর্থাৎ, শ্যামনগর, কাশতেকি অঞ্চল তাদের জন্য এই রুট।
বাসে/ট্রেনে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা তারপর সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগর যাবেন।যেকোনো লোকাল পরিবহন অথবা ভ্যান তারপর ট্রলারে করে শ্যামনগর থেকে সুন্দরবন পৌছাবেন।
যশোর থেকে যদি সুন্দরবন যেতে চান তাহলে আপনার সময় লাগবে ২ঘন্টা -২.৫ ঘন্টা এবং খরচ হবে ২০০-৩০০ টাকা। আপনি যে কোনো লোকাল পরিবহন,মোটরসাইকেলে করেও যেতে পারবেন।
আপনার যাতায়াত খরচ এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার অবস্থানের উপর। আপনি কোথা থেকে সুন্দরবন যাবেন।আমরা শুধুমাত্র ধারণা দিলাম কেমন খরচ হতে পারে এবং কিভাবে সুন্দর বন গেলে সুবিধা হবে।
সুন্দর বন ভ্রমণে খরচের বিবরণ (প্রতি দিন/প্যাকেজ)
আপনার সুন্দর বন ভ্রমণের খরচ নির্ভর করবে রুটের উপর।আপনি কোন রুটে যাবেন বাস/ট্রেন,একা নাকি দুই তিন জন মিলে,প্যাকেজ নাকি নিজের প্লানে যাবেন।এসকল বিষয়ের উপর আপনার খরচ নির্ভর করবে।নিম্নে ২-৩ দিনের একটি ট্যুর প্যাকেজ এবং নিজের প্লানে গেলে খরচের নমুনা তুলে ধরেছি।
অপশন-1: ট্যুর প্যাকেজঃট্যুর প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত থাকবে👇👇
- বোটে যাওয়া আসা
- বোটে থাকা খাওয়া
- ফরেস্ট পারমিশন এবং গাইড ফি
- সুন্দরবন স্পট ভ্রমণ
- ৩ বেলা খাওয়া
১০-১৫ জন লোক খরচ- ৭০০০টাকা থেকে ৮৫০০ টাকা
২০-৩০ জন লোক খরচ- ৫৫০০ টাকা - ৭০০০ টাকা
অপশন-2: নিজের প্লানঃ
খাত | খরচ(প্রায় |
---|---|
যশোর | খুলনা (বাস) ২৫০ টাকা |
খুলনা | সুন্দরবন (ট্রলার) ১৫০০–২০০০ টাকা |
৩ দিনের খাবার | ১০০০–১৫০০ টাকা |
গাইড ফি + পারমিট | ৫০০–১০০০ টাকা |
বোটে থাকা (ভাড়া ভাগ করে) | ২০০০–২৫০০ টাকা |
অর্থাৎ, জন প্রতি আনুমনিক খরচ ৫৫০০৳ -৭৫০০৳ হবে।
আপনি যদি কমেন্ট করে বলেন- কয়জন যাবেন, প্যাকেজ চান না নিজে করবেন তাহলে আমরা আপনাকে সে বিষয়ে বলে দিব।
সুন্দর বন ঘোরার জায়গা ও কার্যক্রম
সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন।এখানকার নিরিবিলি পরিবেশ এবং বন্য প্রাণী সবার ভালো লাগে।তাই সুন্দবন ঘোরার জায়গা ও কার্যক্রম নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ-
- কটকা ও কচি খালিতে ওয়াচ-টাওয়ারে উঠে সুন্দরবন এবং বন্য প্রাণী দেখা।
- ট্রলার বা ক্রোজারে করে নদীর ভিতর দিয়ে চলা এবং বন্য প্রাণী দেখা
- ভ্রমণ গাইডের সাথে নির্দিষ্ট পথ ধরে হেটে বন দেখা।
- শীতকালে বিভিন্ন অতিথি পাখি দেখা।
- দুবলার চরে মেলা দেখা।
- গ্রুপ ক্যাম্পিং অথবা বনভোজন করা।
সুন্দরবন ভ্রমণে কেন শীতকালে যাওয়া ভালো
শীতকালের আবহাওয়া অনেক সুন্দর থাকে।এসময় সুন্দরবন নতুন করে প্রাণ খুজে পায়।নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী সুন্দর বনে শীতকাল ধরা হয়।এসময় ভ্রমণ অনেক উপভোগ্য।নিম্নে সুন্দবন ভ্রমণে কেন শীতকালে যাওয়া ভালো তুলে ধরা হলোঃ-- আবহাওয়া থাকে শীতল ও আরামদায়ক।
- বন্য প্রাণী দেখার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি।
- নদী ও নৌপথ থাকে নিরাপদ।
- দুবলার চরে শীতকালে রাসপূর্ণিমার মেলা হয়।
- পোকামাকড়, জোক ইত্যাদি কম থাকে,যার ফলে বন ভ্রমণের সময় এসব ভয় কম থাকে।
- অতিথি পাখি আগমন ঘটে এসময়।
- বিভিন্ন ট্যুর প্যাকেজ পাওয়া যায়।
সুন্দরবন ভ্রমণে নিরাপত্তা টিপস
- একা জঙ্গলে প্রবেশ করবেন না।ট্যুর গাইড সাথে নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করুন।
- ট্রলারে অথবা বোটে উঠলে সব সময় লাইফ জ্যাকেট পরিধান করুন।যাতে পড়ে গেলেও ঝুকি না থাকে।
- বাঘের এলাকায় সর্তক থাকুন।গভীর বনে একা যাবেন না।সব সবসময় দল ধরে থাকুন।
- বন্য প্রাণীর কাছে যাবেন না।
- নিধারিত ওয়াকওয়ে বা পথ ব্যবহার করুন।
- গাইডের নির্দেশ মেনে চলুন।
- ফোনে চার্জ দেওয়ার জন্য পাওয়ার ব্যাংক রাখুন।
- যদি বাচ্চা নিয়ে যান তাহলে,ছোট বাচ্চাদের সব সময় চোখে চোখে রাখুন।
লেখকের শেষ মন্তব্য
আমরা আজকের আর্টিকেলে সুন্দরবন ভ্রমণ গাইড-কোথায় যাবেন, খরচ, নিরাপত্তা ও সেরা সময় নিয়ে আলোচনা করে।আশা করি,আপনার এখন সুন্দর বন ভ্রমণের জন্য ভালো একটা ধারণা পেয়ে গেছেন।
আর্টিকেল-টি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না এবং পরিচিত দের সাথে শেয়ার করুন।
এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
রিফাত আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url