মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি কার্যকারী বাস্তবমুখী উপায়
WiFi তারের দাম কত?মানসিক চাপ এমন এক শক্তি যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনাকে পিছিয়ে দিবে। এই ব্লগে আমরা শেয়ার করবো মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি কার্যকারী বাস্তবমুখী উপায় যা দিয়ে আপনার ভেতরের সমস্ত চাপ কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
মানসিক চাপ মানুষকে দৈনন্দিন জীবনে পিছিয়ে দেয়। তাই আজকের পোস্ট থেকে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০ টি কার্যকরী উপায় জানার পাশাপাশি মানসিক চাপের বৈশিষ্ট্য/লক্ষণ এবং মানসিক চাপের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব জানুন।
সূচিপত্রঃ মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি কার্যকারী বাস্তবমুখী উপায়
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি কার্যকারী উপায
মানসিক চাপ (Stress) আমাদের জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ, তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে শরীর ও মনের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমানো যায় এবং ইতিবাচক দিকগুলো ফুটে ওঠে।নিচে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি কার্যকারী উপায় দেওয়া হলো:
- নিয়মিত নামাজ ও দোয়া অথবা ধ্যান- নিয়মিত এগুলো চর্চা করলে মন শান্ত করে, আত্মিক প্রশান্তি দেয় এবং মানসিক চাপ কমে।
- গভীর শ্বাস প্রশ্বাস- নিন, এতে মস্তিষ্ক শান্ত হয় এবং মানসিক চাপ কমে।
- পর্যাপ্ত ঘুম- নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম দিতে হবে, (৭-৮) ঘন্টা।এতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে যার ফলে strees কমবে।
- হাঁটাহাঁটি/ব্যায়াম- ব্যায়াম করা শরীরের জন্য খবুই গুরুত্বপূর্ণ।আপনি যদি প্রতিনিয়ত শরীর চর্চা করে তাহলে এই শরীর চর্চা মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ হয়।
- বিশেষ করে সময় ব্যবস্থাপনা- সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করে ফেলুন।কারণ- আপনার কাজ যদি পড়ে থাকে তাহলে মানসিক চাপ বাড়বে, এজন্য সময়ের কাজ সময়ে করুন, তাহলে মাথায় কোনো চাপ থাকবে না।প্রয়োজনে কাজের জন্য চার্ট তৈরি করে নিন।
- সঠিক খাদ্যাভাস- মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে হলে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।তাই প্রতিনিয়ত ঝাল, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত কফি এড়িয়ে চলে, ভিটামিন, মিনারেল, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খান,যা মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখে।
- সাপোর্ট- পরিবার, বন্ধু অর্থাৎ কাছের মানুষের কাছে নিজের অনুভূতি গুলো শেয়ার করুন।এটি আপনার মানসিক চাপ অনেকটাই কমিয়ে দিবে।
- নিজেকে সময় দিন- নিজের জন্য সময় বের করুন এবং সেই সময়টাই নিজের পছন্দের কিছু করুন।যেমন- বই পড়া, ঘোরাঘুরি করা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি।এটি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম কৌশল।
- পজিটিভ চিন্তা করা- নেতিবাচক চিন্তা মানসিক চাপ বাড়ায় তাই সব সময় ইতিবাচক অর্থাৎ পজিটিভ চিন্তা করা উচিত এটি strees কমায়।
- অপ্রয়োজনীয় দায়িত্ব এড়িয়ে চলা- সব সময় দায়িত্বের মধ্যে থাকলে, এমনিই মাথায় একটা চাপ চলে আসে তাই সময় দায়িত্ব একা নিয়ে সামলানোর চেষ্ঠা না করাই উচিত।প্রয়োজনে "না" বলা শিখুন।
মানসিক চাপ কাকে বলে
মানসিক চাপ হলো- মস্তিষ্ক ও শরীরের এক ধরনের প্রতিক্রিয়া, যা আমাদেরকে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে বাধ্য করে।এটি ঘটে যখন কোনো ব্যাক্তি কঠিন চ্যালেঞ্জ, সমস্যা সম্মুখীন হই।
অর্থাৎ, যখন কোনো কাজ নিজের সামর্থ্যোর বাইরে মনে হয় কিন্তু জোরপূর্বক মনে বিরুদ্ধে গিয়ে সেই কাজ করা হয় তখন মানসিক ভাবে একধরণের চাপ সৃষ্টি হয়।এই চাপকেই মানসিক চাপ বলে।
মানসিক চাপের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি
মানসিক চাপের প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ রয়েছে, যা দেখে আমরা সহজেই শনাক্ত করতে পারি, যে ঐ ব্যাক্তি মানসিক চাপে ভুগছে।তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মানসিক চাপের বৈশিষ্ট্য গুলো জেনে নেওয়া যাক।
- অস্থিরতা বা টেনশন অনুভব করা।যেমন - পরিক্ষার আগে অতিরিক্ত ভয় পাওয়া বা চাকরির ইন্টারভিউতে ভয় পাওয়া।
- যে কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা
- ঘুম কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত মাত্রায় ঘুম হওয়া
- কেনো কিছুর উপর রাগ, ভয় বা উদ্বেগ বেড়ে যাওয়া
- শারীরিক বেশ কিছু লক্ষণ যেমন- মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, হজমের সমস্যা ইত্যাদি।
মানসিক চাপ কমানোর ইসলামিক উপায়
ইসলাম আমাদের মানসিক চাপ কমানোর উপায় শিক্ষা দেয়। কিন্তু কিভাবে শিক্ষা দেয় এটা অনেকেই বুঝতে পারেন না, তাহলে আর দেরি না করে মানসিক চাপ কমানোর ইসলামিক উপায় জেনে নিন।
- আল্লাহর উপর ভরসা রাখা- কুরআনে বলা হয়েছে:যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।(সূরা আত-তালাক ৬৫:৩) অর্থাৎ, সর্বাস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে দুশ্চিন্তা কমে যায়।
- নিয়মিত সালাত আদায়- নামাজ অন্তরের প্রশান্তি আনে।নিয়মিত নামাজ আদায় করার মাধ্যমে সে ব্যাক্তি সকল কুৎসিত কাজ ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে।
- কুরআন তিলাওয়াত ও শ্রবণ- নিয়মিত কুরআন তেলওয়াত ও শ্রবন করা এতে অন্তরের প্রশান্তি আনে।
- দুয়া করা- সবসময় আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে দোয়া করা। হয়রত মোহাম্মদ (স.) মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য বিভিন্ন দোয়া পড়তেন এবং আমাদেরকেই সেগুলো পড়তে বলেছেন।
- ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা করা)- বারবার আস্তাগফিরুল্লাহ বলা, এটি হৃদয়কে হালকা করে এবং অন্তরে প্রশান্তি আনে।
- সবর ও কৃতজ্ঞতা অনুশীলন- যে কোনো সমস্যায় সবর করা, আল্লাহ সবর কারীকে পছন্দ করেন।আর আল্লাহর দেওয়া ছোট ছোট প্রতিটি নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, এটি মানসিক ভাবে শান্তি দিবে।
- ভালো সঙ্গ নির্বাচন- ভালো মানুষের সাথে মেলামেশা করুন।সব সময় আপনার চিন্তা ভাবনা থাকবে ইতিবাচক।এতপ করে আপনার ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হবে।
- আল্লাহর কাছে নিজের কষ্ট কষ্ট ব্যাক্ত করুন- নিজের দুঃখ কষ্ট সব সময় আল্লাহর কাছে মন খুলে ব্যাক্ত করুন।আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।
- আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখুন- মনের ভিতর সবসময় বিশ্বাস রাখুন, ইহকালের জীবন ক্ষণস্থায়ী আর আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী।এই বিশ্বাস আপনাকে সকল পাপ কাজ এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিবে।
মানসিক চাপের লক্ষণ
মানসিক চাপ মানুষের শরীরিক, মানসিক ও আচারণগত দিক থেকে বেশকিছু লক্ষণ দেখা যায়।তবে, মানুষ ভেদে লক্ষণ গুলো ভিন্ন হতে পারে।নিম্নে মানসিক চাপের লক্ষণ তুলে ধরা হলোঃ-
মানসিক চাপের শারিরীক লক্ষণ-- মাথাব্যাথা করা
- ঘুমের সমস্যা
- শরীর ক্লান্তি ও দুর্বলতা লাগা
- ক্ষুধা কমে যাওয়া
- বুক ধড়পড় করা/হার্টবিট বেড়ে যাওয়া
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা
- যে কোনো কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া।ছোট খাটো বিষয় নিয়ে রাগ করা
- মনে অস্থিরতা
- যে কোনো কিছু নিয়ে হতাশ হয়ে পড়া
- কাজ কর্ম ভালো লাগে না।যে কোনো কাজের প্রতি অনিহা সৃষ্টি হওয়া
- সামাজিকভাবে নিজেকে গুটিয়ে ফেলা
- কোনো কারণ ছাড়াই রেগে যাওয়া
- নানারকম নেশায় আসক্ত হয়ে পড়া যেমন- মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিল ইত্যাদি।
- কাজে ঠিকমতো মনোযোগ না থাকার ফলে, কাজের গুণগত মান কমে যাওয়া।
মানসিক চাপের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব
মানসিক চাপ সব সময় আমাদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে না।এটি আমাদের উপর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই ধরণের প্রভাবই ফেলে। তাই চলুন আগে মানসিক চাপের ইতিবাচক প্রভাব গুলো জেনে নিই।
- মোটিভেশন তৈরি করে – যে কোনো কাজ শুরু করার জন্য অনুপ্রেরণা জোগাতে সাহায্য করে।
- মনোযোগ বৃদ্ধি করে – নির্দিষ্ট একটি কাজের উপর মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
- সৃজনশীলতা বাড়ায় – যে কোনো ধরনের সমস্যায় চিন্তা করে সমাধানের পথ বের করতে সাহায্য করে।
- সহনশীলতা গড়ে তোলে – মানসিক চাপ সহ্য করে নিয়ে যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে।
- উন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করে – ভালো প্রতিযোগীদের সাথে টক্কর নিয়ে নিজের পারফর্মেন্স ভালো করার সম্ভাবনা বাড়ে।
মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রভাব
অতিরিক্ত মানসিক চাপ মানুষের শরীরের উপর বেশকিছু খারাপ প্রভাব ফেলে।নিম্নে মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রভাব তুলে ধরা হলো-
- শারীরিক সমস্যা হয়- মাথাব্যাথা, উচ্চরক্তচাপ, অনিদ্রা ইত্যাদি
- মানসিক সমস্যা- দুশ্চিন্তা, রাগ, হতাশা ইত্যাদি
- মনোযোগ কমে যায়- অতিরিক্ত মানসিক চাপ কাজের প্রতি ফোকাস করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়
- পারিবারিক সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব- যে কোনো ছোটো খাটো বিষয় নিয়ে পরিবারের সাথে ঝগড়া বিবাদ করা
- বদ অভ্যাস- নিজেকে বিভিন্ন বদ অভ্যাসের সাথে জড়িয়ে ফেলা যেমন- মদ, বিড়ি, সিগারেট ইত্যাদি
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের উপায়-লেখকের শেষ মন্তব্য
আজকের ব্লগে আমরা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি কার্যকারী বাস্তবমুখী উপায় তুলে ধরেছি এবং মানসিক চাপ কমানোর ইসলামিক উপায়,মানসিক চাপের লক্ষণ, ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ইত্যাদি বিষয় শেয়ার করেছি।আশা করি ব্লগটি আপনার ভালো লেগেছে।এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।।
এমন সব নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের সাইটে নিয়মিত ভিজিট করুন।
রিফাত আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url